অনুবাদ সাহিত্য

(রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত)

অনুবাদ সাহিত্য কী?

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে রচিত গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যধারার একটি হচ্ছে অনুবাদ সাহিত্য
মূলত সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে এই সকল সাহিত্যকর্ম।

অনুবাদ সাহিত্যের সৃষ্টির কারণ

  • তুর্কি আক্রমণের পরবর্তী বিপন্নতা
  • সংস্কৃত সাহিত্যের রসাস্বাদনের প্রতি আগ্রহ
  • হিন্দু সংস্কৃতির পুনরুত্থানের চেষ্টা
  • রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতা
  • সক্ষম ও আগ্রহী কবির আবির্ভাব

 

 

অনুবাদ সাহিত্যের প্রধান তিন ধারা

  • রামায়ণ অনুবাদ
  • মহাভারত অনুবাদ
  • ভাগবত অনুবাদ

 

 

✨ রামায়ণ অনুবাদ ধারা

মূল রচনা

  • ভাষা: সংস্কৃত
  • গ্রন্থ: ‘রামচরিত’
  • খণ্ড সংখ্যা: ৭
  • মোট শ্লোক: ২৮,০০০
  • রচয়িতা: বাল্মীকি (মূল নাম: দস্যু রত্নাকর)
  • বাল্মীকি শব্দের অর্থ: উইপোকা
  • প্রধান চরিত্রসমূহ: রাম, লক্ষ্মণ, সীতা, রাবণ

 

 

বাংলা অনুবাদ

কৃত্তিবাস ওঝা

  • বাংলা অনুবাদ: ‘শ্রীরাম পাঁচালী’
  • রচনাকাল: আনুমানিক ১৪৪৩ খ্রিস্টাব্দ (মতান্তরে ১৪৬৫-১৪৭৬ খ্রিঃ)
  • জন্মস্থান: ফুলিয়া গ্রাম (নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ)
  • পিতার নাম: বনমালী, মাতার নাম: মালিনী
  • উপাধি: মুখোপাধ্যায় (মুখুটি)
  • ছন্দ: পয়ার ও ত্রিপদী
  • জনপ্রিয় অংশ: ‘অঙ্গদের রায়বার’ (হাস্যরসাত্মক চিত্রণ)

পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ে মতভেদ

  • গৌড়েশ্বর রুকনউদ্দিন বরবক শাহ
  • রাজা গণেশ
  • কংসনারায়ণ

 

 

অন্যান্য রামায়ণ অনুবাদক

  • চন্দ্রাবতী: বাংলার প্রথম মহিলা কবি ও মহিলা অনুবাদক (কিশোরগঞ্জ)
  • অদ্ভুত আচার্য: চৈতন্য পরবর্তী রামায়ণ অনুবাদক
  • অন্যান্যের মধ্যে রয়েছেন কৈলাস বসু, ভবানী দাস, ঘনশ্যাম দাস, শঙ্কর কবিচন্দ্র প্রমুখ।
  • উল্লেখযোগ্য রচনা: ‘শ্রীরামমঙ্গল’ — শঙ্কর কবিচন্দ্রের লেখা

 

 

✨ মহাভারত অনুবাদ ধারা

মূল রচনা

  • ভাষা: সংস্কৃত
  • খণ্ড সংখ্যা: ১৮
  • রচয়িতা: কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস
  • প্রধান চরিত্র: অভিমন্যু, অর্জুন, কর্ণ, গান্ধারী, দ্রৌপদী

 

 

বাংলা অনুবাদ

শ্রীকর নন্দী

  • আংশিক অনুবাদক (অশ্বমেধ পর্ব)
  • গ্রন্থ: ‘ছুটিখানি মহাভারত’ (পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ-এর পৃষ্ঠপোষকতায়)

কবীন্দ্র পরমেশ্বর

  • প্রথম পূর্ণাঙ্গ অনুবাদক
  • অনুবাদকৃত মহাভারত: ‘পরাগলী মহাভারত’

কাশীরাম দাস

  • শ্রেষ্ঠ অনুবাদক
  • গ্রন্থ: ‘ভারত পাঁচালী’
  • জন্মস্থান: সিঙ্গি গ্রাম, কাটোয়া মহকুমা, বর্ধমান
  • পিতার নাম: কমলাকান্ত
  • কুল পদবি: দেব
  • রচনাকাল: চৈতন্য পরবর্তী যুগ (সপ্তদশ শতক)

 

 

✨ ভাগবত অনুবাদ ধারা

মূল রচনা

  • ভাষা: সংস্কৃত
  • খণ্ড সংখ্যা: ১২
  • রচয়িতা: কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস

 

বাংলা অনুবাদ

মালাধর বসু

  • প্রথম বাংলা অনুবাদক
  • জন্ম: ১৪২০-১৪২২ খ্রিস্টাব্দ, কুলীন গ্রাম (বর্ধমান)
  • পিতার নাম: ভগীরথ, মাতার নাম: ইন্দুমতী
  • উপাধি: গুনরাজ (রুকনউদ্দিন বরবক শাহ কর্তৃক প্রদত্ত)
  • গ্রন্থ: ‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ (অন্য নাম: ‘গোবিন্দবিজয়’, ‘গোবিন্দমঙ্গল’)
  • রচনাকাল: ১৪৭৩-১৪৮০ খ্রিস্টাব্দ
  • ভিত্তি: ভাগবত পুরাণের দশম ও একাদশ স্কন্ধ
  • মোট অধ্যায়: ৩৩৫
  • তিন খণ্ড:
    • আদি খণ্ড (বৃন্দাবনলীলা)
    • মধ্য খণ্ড (মথুরালীলা)
    • অন্ত খণ্ড (দ্বারকালীলা)

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *