বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আহ্বান’ গল্প অবলম্বনে নাটক

‘বন্ধন’

নাট্যরূপ: মুনশি আলিম

  রচনার তারিখ: ২১.০৯.২০১৫

 

চরিত্র লিপি:

গোপাল:                                         শিক্ষিত যুবক

চকোত্তি মশায়:                                 গ্রামের প্রবীণ ব্রাহ্মণ

গ্রামীন কয়েকজন যুবক:                      চকোত্তি মশায়ের সাথের

বুড়ি:                                             অসাম্প্রদায়িক চেতনার ছিন্নমূল নারী

হাজরা ব্যাটার বউ:                            বুড়ির পাতানো মেয়ে

দ্বিগম্বরী:                                         মধ্যবয়সী পরশু সর্দারের বউ

শুকুর:                                            প্রবীণ মুসলিম

নসর:                                             মুসলিম যুবক

আবেদালি:                                      মুসলিম যুবক

নাতজামাই:                                     বুড়ির নাত জামাই

আবদুল:                                         মুসলিম যুবক

গণি:                                              আবেদালির ছেলে, মুসলিম

গ্রামীণ যুবক ৫/৬ জন:                        বিভিন্ন বয়সি মুসলিম পুরুষ

গ্রামীণ মহিলা ৫/৬ জন:                      বিভিন্ন বয়সি মুসলিম মহিলা

 

 

 

১ম দৃশ্যের প্রথম চিত্রায়ণ:

 

আবহ সঙ্গীত: আমি কান পেতে রই…

কৃতজ্ঞতা: শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

শর্ট নেওয়ার স্থান ১ম

জঙ্গলভর্তি পুরনো বাড়ি

 

গোপাল: উদাস ভঙ্গিমায় গ্রামের মেঠোপথ ধরে হাঁটবে। সামনে জঙ্গলভর্তি পুরনো বাড়ি। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সে কিছুক্ষণ আপন মনে বলবে- “কে বলবে-এই বাড়িতেই আমার জন্ম হয়েছিল! (একটু অদূরেই শ্মশানের দিকে তাকিয়ে) মা, বাবা যেতে না যেতেই তুমিও আমাকে একা ফেলে পরপারের যাত্রী হয়েছে; আমি বুঝে উঠার আগেই তোমরা চলে গেলে? আমার যে আর কিছুই রইল না! কেউ রইল না! তোমাদের স্মৃতিবিজরিত এই পুরনো ভাঙ্গা বাড়িটা ছাড়া আমার বলতে যে আর কিছুই রইল না! আমার যে আর কিছুই রইলো না!! (কান্না)

 

২য় শর্ট

গ্রামের চকোত্তি মশায়ের বাড়ির সামনে

 

গোপাল জঙ্গল বাড়ি থেকে পুনরায় হাঁটবে। পথিমধ্যে চকোত্তি মশায়ের বাড়ির সাথে দেখা-

 

চকোত্তি মশায়: কী হে, কেমন আছ?

গোপাল: আজ্ঞে, ভালো।

চকোত্তি মশায়: এতকাল পরে বুঝি দেশের কথা মনে পড়লো?

গোপাল: (নীরব হয়ে মাথা নিচু করে চুলকাচ্ছে)

চকোত্তি মশায়: জানো গোপাল, তোমার বাবা থাকতে না- আমরা সারাগ্রাম হইচই করে ঘুরে বেড়াতাম, গ্রামের কত জনের গাছের কত জাতের ফল যে পেরে খেতাম তার কোন হিসেব ছিল না! একজন আরেকজনকে না দেখলে যেন পেটের ভাতই হজম হতো না! আজ সেই প্রিয় বন্ধটা আময় ফেলে… দীর্ঘশ্বাস! (বলতে বলতেই যেন তার গলা ধরে আসবে)

গোপাল: সে কী কাকাবাবু, আপনি কাঁদছেন?

চকোত্তি মশায়: না! না! এই চোখে যেন কী হয়েছে, খালি পানি এসে যায়!

গোপাল: বাবার স্নেহ নেওয়ার খুব একটা সৌভাগ্য আমার হয়নি, আপনাকে দেখে কেন যেন আজ বাবার কথা খুব মনে পড়ছে… দীর্ঘশ্বাস! (এরপর প্রণাম করবে)

চকোত্তি মশায়: থাক, থাক, বেঁচে থাকো বাবা, দীর্ঘজীবী হও। তা বাড়িঘর করবে না?

গোপাল: আজ্ঞে যে সামান্য মাইনে পাই-

চকোত্তি মশায়: তাতে কী? শোন ছেলের কথা! গ্রামের ছেলে গ্রামে বাস করবে, এতে আর সামান্য মাইনেই বেশি মাইনে কী?

আমি খড় বাঁশ দিচ্ছি, চালাঘর তুলে ফেল, মাঝে মাঝে যাতায়াত করো।

 

উপস্থিত কয়েকজন পথিক: সমস্বরে বললো হ্যা হ্যা, অন্তত খড়ের ঘর উঠাতে হবে।

গোপাল: আজ্ঞে, আপনারা গুরুজন, আপনারা যা ভালো মনে করেন তাই হবে।

চকোত্তি মশায়: তো আমরা কাল থেকেই কাজ শুরু করে দিতে চাই, তোমরা কী বলো?

উপস্থিত কয়েকজন পথিক: আজ্ঞে কর্তা মশাই। তাই হোক।

উপস্থিত কয়েকজন পথিক: সময় করে বিকেল বেলা একবার এসো। এখন তবে চললুম।

গোপাল: নমস্কার

চকোত্তি মশায়: নমস্কার

 

৩য় শর্ট

বড় আম বাগানের ভিতর।

আম বাগানের ভিতর দিয়ে গোপাল হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ আম গাছের ছায়ায় একটি বৃদ্ধার চেহারা, ডান হাতে নড়ি ঠকঠক করতে করতে-বোধহয় বাজারের দিকে চলেছে। বুড়িকে দেখে গোপাল দাঁড়িয়ে গেল।

গোপাল: কোথায় যাবে?

বুড়ি: বাজারে বাবা। (না চিনতে পেরে ডানন হাত উঁচিয়ে তালু আড়তভাবে চোখের উপর ধরে) কে বাবা, তুমি? চেনলাম না তো?

 

গোপাল: চিনবে না আমি অনেক দিন গায়ে আসিনি।

বুড়ি: তা হবে বাবা। আমি আগে তো এপাড়া-ওপাড়া যাতাম আসতাম না। তিনি থাকতি অভাব ছিল না কোনো জিনিসের। গোলাপোরা ধান, গোয়ালপোরা গরু… দীর্ঘশ্বাস!

গোপাল: তোমাকে কে তো চিনতে পারলাম না, বুড়ি?

বুড়ি: আমার তো তেনার নাম করতে নেই বাবা। করাতের কাজ করতেন।

গোপাল: তোমার ছেলে আছে?

বুড়ি: (পুনরায় দীর্ঘশ্বাষ ফেলে) কেউ নেই বাবা, কেউ নেই। এক নাত জামাই আছে সে মোরে ভাত দেয় না। আমার বড্ড কষ্ট হয়। ভাত জোটে না সবদিন।

গোপাল: (পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে) এই নাও। কিছু একটা খেয়ে নিও। ভালো থেকো। চললুম।

বুড়ি: নির্বাক হয়ে তার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

 

২য় দৃশ্য

চতুর্থ শর্ট

খুড়ো মশায়ের পুরনো বাড়ি।

 

গোপাল ঘুম থেকে উঠে হাই তোলতে তোলতে বারান্দায় এসে দেখে সেই বুড়ি হাজির। খুড়ো মশাই বারান্দায় বসে  আগেই তামাক টানছিলেন। গোপাল বুড়ির পরিচয় জানার জন্য খুড়ো মশাইয়ের দিকে তাকাল।

 

খুড়ো: ও হরো জমির করাতির স্ত্রী। অনেকদিন আগে মরে গিয়েছে জমির।

বুড়ি: (চোখে একটু কম দেখে তাই অন্যদিকে তাকিয়ে) ও বাবা।

গোপাল: এই যে আমি, এখানে।

খুড়ো: (বুড়িকে বুঝিয়ে বললেন গোপালের সব পরিচয়- সংলাপগুলো শব্দহীন হবে)

 

৩য় দৃশ্য:

৫ম শর্ট:

কয়েক মাস পর। জ্যৈষ্ঠ মাসের চিত্র ধারন। (বুড়ির সাথে হাজরা ব্যাটার বউ )

 

নতুন খড়ের ঘর। সকাল বেলা।

গোপাল: কী বুড়ি, ভালো আছ?

বুড়ি: (ছেঁড়া কাপড়ের গাইট খোলে  গোটা কতক আম গোপালের সামনে মাটিতে রেখে) আমার কি মরণ আছে রে বাবা!

গোপাল: ও আম কীসের?

বুড়ি: (দন্তহীন হাসি) অ গোপাল আমার, তোর জন্যি নিয়ে এলাম। গাছের আম বেশ কড়া মিষ্টি, খেয়ে দেখ এখন।

গোপাল: বুড়ির দিকে গভীর মমতায় তাকিয়ে রইল।

বুড়ি: খাও কোথায় হ্যাঁ বাবা?

গোপাল: খুড়ো মশায়ের বাড়ি

বুড়ি: বেশ যত্ন করে তো ওনারা?

গোপাল: তা করে।

বুড়ি: দুধ পাচ্ছ ভালো?

গোপাল: ঘুঁটি গোয়ালিনী দেয়, মন্দ না।

বুড়ি: ও বাবা, ওর দুধ! অর্ধেক জল- দুধ খেতি পাচ্চ না ভালো সে বুঝেচি। (নিজ আপন মনে বকবক করে)  আমগুলো রাখো। গেলুম বাবা।

গোপাল: গোপাল তার পন্থ পানের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

 

৬ষ্ঠ শর্ট:

সূর্য উঠার দৃশ্য ধারন।  খুব সকাল। খড়ের ঘরের দৃশ্য।

 

বুড়ি: অ গোপাল।

গোপাল: (বিছানা ছেড়ে উঠে) এত সকালে কী মনে করে? হাতে কী

বুড়ি: (হাতের নড়ি দাওয়ায় ঠেস দিয়ে রেখে) এক ঘটি দুধ আনলাম তোর জন্যি।

গোপাল: কে কী! এত সকালে দুধ পেলে কোথায়?

বুড়ি: আমায় মা বলে ডাকে ঐ হাজরা ব্যাটার বউ। তারও কেউ নেই। মোর চালাঘরের পাশে ওর চালাঘর। ওরে কাল রাত্রিরে বলে রেখে দিয়েছিলাম- বউ, গোপাল আমার দুধ খেতি পায় না। তাই আজ ভোরে উঠে দেখি আমারে ডাকচে, মা ওঠো, তোমার গোপালের জন্যি দুধ নিয়ে যাও।

গোপাল: ওহহ! আচ্ছা কেন বলতো এসব! এরকম আর কখনো করবে না। কত পয়সা দাম দিতে হবে বল।কতটা দুধ?

বুড়ি: (একটু ভয়ে ভয়ে) কেন বাবা, পয়সা কেন?

গোপাল: পয়সা না তো তুমি দুধ পাবে কোথায়?

বুড়ি: ওই যে, বললাম বাবা, আমার মেয়ের বাড়ি থেকে।

গোপাল: তা হোক, তুমি পয়সা নিয়ে যাও। সে তো গরিব লোক!

বুড়ি: (দীর্ঘশ্বাস ফেলে) হাত বাড়িয়ে টাকা নিল।

 

গোপাল: (নেপথ্য সংলাপ) পয়সা দিয়ে কি ভুল করলাম? বুড়ি তো আমাকে বোধহয় ছেলেই ভাবে,তার স্নেহের দানকে টাকা দিয়ে কি অসম্মান করলাম?

 

(চোখের দৃষ্টি দূর দিগন্তের সীমারেখায় নিয়ে শর্ট শেষ)

 

৭ম শর্ট:

সূর্য উঠার দৃশ্য ধারন।  খুব সকাল। খড়ের ঘরের দৃশ্য।

 

বুড়ি: অ গোপাল

গোপাল:  সেকি! এত সকালে?

বুড়ি: এই দুটি কচি শসার  জালি মোর গাছের, এই নাও। নুন দিয়ে খাও দিকিন মোর সামনে?

গোপাল: এইভাবে আর কতদিন দিবে? আমি তোমার কী হই?

বুড়ি: নীরব

গোপাল: বুড়ি তোমার চলে কীসে?

বুড়ি: ওই যারে মেয়ে বলি, ও বড্ড ভালো। লোকের ধান ভেনে যে চাল পায় তা থেকে আমায় দুটো না দিয়ে খায় না।

গোপাল: একা থাক?

বুড়ি: তা একদিন মোর ঘরখানা না হয় দেখতি গেলে। গোপাল, আমি নতুন খাজুর পাতার চাটাই বুনে রেখে দিয়েছিলাম তোমারে বসতি দেবার জন্যি।

গোপাল:  (একটু ম্লান হেসে) ঠিক আছে, ময় করে একবার যাব।

বুড়ি: ভালো থেকো, চললুম।

গোপাল: (বুড়ির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নির্বাক কথন) এই বুড়িটা প্রতিদনই কখনো আম, কখনো পাতি লেবু, কখনো বা একছড়া কাঁচাকলা কি একফালি কুমড়ো… দিয়ে যায়। বিনিময়ে টাকা দিতেও কোথায় যেন বাঁধে! এই বুড়িকে দেখলে কেন যেন মায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মা! (অশ্রুসজল দীর্ঘশ্বাস)

 

 

 

 

চতুর্থ দৃশ্য

৮ম শর্ট:

পাঁচ-ছয় মাস পর। আশ্বিন মাসের চিত্র ধারন।

 

গোপাল ঘরে বসা। বাহির থেকে জনৈক লোকের ডাক-

হাজরা ব্যাটার বউ: বাবু ঘরে আছেন গা?

গোপাল: (ঘর থেকে বের হতেই সে মধ্যবয়সী স্ত্রীলোকটি ঘোমটা টেনে দিল)

হাজরা ব্যাটার বউ: বাবু কবে এসেছেন?

গোপাল: দিন পাঁচ-ছয় হলো। কেন?

হাজরা ব্যাটার বউ: আমার সেই মা পেটিয়ে দিলে, বলে দেখে এসো গিয়ে

গোপাল: কে?

হাজরা ব্যাটার বউ: ও সেই বুড়ি- এখানে যিনি আসতো। তেনার বড্ড অসুখ। এবার বোধহয় বাঁচবে না। গোপাল কবে আসবে, গোপাল কবে আসবে- অস্থির, আমারে রোজ শোধায়। একবার দেখে আসুন গিয়ে বড্ড খুশি হবে তাহলি।

 

নবম শর্ট

আশ্বিনের বিকেল বেলার দৃশ্য ধারন।

 

গোপাল হেঁটে হেঁটে দেখতে গেল বুড়িকে। বুড়ি শুয়ে আছে মাদুরের ওপর। মাথায় মলিন বালিশ। গোপাল গিয়ে কাছে দাড়াতেই বুড়ি ধরমড় করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে।

 

গোপাল: উঠো না, সেকি? ঘাড়ে ব্যথা পাবে যে!

বুড়ি: (প্রসন্ন চিত্তে) অ মোর গোপাল! বসতে দে গোপালকে। বসতে দে।

গোপাল: বসবার দরকার নেই, থাক।

বুড়ি: গোপালরে ওই খুজুরের চটখানা পেতে দে। জানিস, তোর জন্যি খাজুরের চাটাইখানা কদ্দিন আগে বুনে রাখলাম। ওখানা পুরনো হয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে। তুই একদিনও এলি না গোপাল! অসুখ হয়েছে তাও দেখতে এলি না! তুই বড় নিষ্ঠুর রে… (অশ্রুসিক্ত চোখ) গোপাল, আমার একটা আবদার রাখবি বাবা?

গোপাল: বলো

বুড়ি: আমি যদি মারা যাই, কবে আমার কাফনের কাপড় তুই কিনে দিস। পারবি?

গোপাল: মাথা নেড়ে বলল- হু।

(পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে হাজরা ব্যাটার বউকে ডেকে হাতে দিয়ে ) বুড়ির পথ্য ও ফলের জন্য দিলুম। (ফিসফিস করে) হয়ত আর বেশি দিন বাঁচবে না। এই অসুখ থেকে উঠবে না।

 

 

পঞ্চম দৃশ্য

বছর দেড়েক পর।

 

 

দশম শর্ট

শরতের দৃশ্য ধারন। গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে গোপাল হাঁটছে। হঠাৎ পরশু সর্দারের বউ দিগম্বরীর সাথে দেখা।

 

দ্বিগম্বরী: ওমা, গোপালদা যে, আজই বুঝি এলে? সে বুড়ি যে কাল রাতে মারা গিয়েছে। জানো, মরার আগে সে তোমার বড্ড নাম করলো।

গোপাল: বলো কী!

দ্বিগম্বরী: হ্যাঁ, দাদা। বিশ্বাস না হয় একবার দেখেই আসুন না!

গোপাল: (দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) হুম। (প্রস্থান)

 

 

একাদশ শর্ট:

ঘরে প্রবেবেশের আগে মুহূর্তে বুড়ির নাতজামাই দেখা করতে এল। তাকে দেখেই গোপাল পকেট থেকে টাকা বের করে দিল।

 

গোপাল: শুনুন, আমি বুড়িকে কথা দিয়েছিলাম কাফনের কাপড়ের টাকাটা দিব। মনে হয় কথাটি আপনাদেরকেও বলে গেছে।

নাতজামাই: জ্বি

গোপাল: এই নিন (টাকা দিবে)। এতে হবে?

নাতজামাই: জ্বি হবে। মাটি দেওয়ার সময় একবার যদি যেতেন…!

গোপাল: ঠিক আছে, যাব।

 

 

 

 

 

 

৬ষ্ঠ দৃশ্য:

দ্বাদশ শর্ট:

বেলা ঠিক বারোটার দৃশ্য ধারন। বন-জঙ্গলের মধ্যে দুজন যুবক  কবর খুঁড়ছে। পাশে নারী পুরুষ অনেকেই রয়েছে। বেশির ভাগ পুরুষের মাথায় টুপি। মহিলারা একটু অদূরে মুখে আঁচল গুঁজে বিলাপ করছে।  গোপাল একে একে কয়েকজনের সাথে হাত মিলাল।

 

প্রবীণ শুকুর: এই যে বাবা, এসো। বুড়ির মাটি দেওয়ার দিন তুমি কনে তেকে এলে? তুমি তো জানতে না!

গোপাল: শরতের দুদিনের ছুটি ছিল। বাড়ি ফিরতেই দিগম্বরদি বুড়ির খবর দিলে- তাই চলে এলুম।

প্রবীণ শুকুর: তা খুব ভালো করেছ বাবা, বুড়ি যে তোমাকে বড্ড ভালোবাসত। ঐ যে দেখ আবদুল, নসর, আবেদালি, গণি মিয়া ওরা সকাল থেকেই বুড়িকে দাফন করার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

(নেপথ্য কণ্ঠ- কবর খুঁড়া শেষ, এই আস্তে আস্তে লাশ কবরে নামাও। দোয়া পড়তে থাকে । কবরে নামানোর পর এক কোদাল করে মাটি দিল নিকটাত্মীয়রা।)

প্রবীণ শুকুর: গোপাল, দ্যাও বাবা- তুমিও দ্যাও।

গোপাল: সবার মুখের দিকে কাতর নয়নে তাকাল। তারপর ধীরে ধীরে কোদাল হাতে নিয়ে সেও এক কোদাল মাটি দিল। এরপর আকাশের দিকে তাকালো। সেথা একাবার তার মায়ের ছবি ভেসে উঠে আরেকবার বুড়ির ছবি। শ্মশানের মতোই চারদিক নীরব। ধীরে ধীরে তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।

 

যবনিকা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *