উপন্যাস
বাংলাদেশ ইজ এ বিউটিফুল কান্ট্রি
মুনশি আলিম
এক
ইদের ছুটিতে একবার জাফলং বেড়াতে গেলাম। প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের জিরোপয়েন্টে দাঁড়িয়ে পিয়াইন নদীর স্বচ্ছ জলরাশি দেখার আনন্দই আলাদা। ভারতের শিলং, পাহাড়ঘেরা ঘন অরণ্য, বিস্তীর্ণ বালুচর, চুনাপাথর, পানপাতার অরূপ সৌন্দর্য, কিংবা খাসিয়াপল্লির কথা নাহয় নাইবা বললাম। খাসিয়াপল্লির ভেতর দিয়ে নদীর পাড়ে যেতেই নীল আকাশের প্রেমে পড়ে গেলাম। অদূরেই ভারতের দ্বৈত্যকায় কালো পাথর হাতছানি দিয়ে ডাকছে। ক্যামেরা বের করতেই দেখি এক ইংরেজ যুবতী কালো স্নানগøাসের ভেতর দিয়ে দূরের পাহাড়কুঞ্জ দেখছে আর একটু পরপর ক্যামেরায় ক্লিক করছে। কাছে যেতেই সে কিছু একটা জানার জন্য এগিয়ে এলো।
-হাই!
-হাই!
-ইজ দেয়ার এনি গুড রেসিডেনশিয়াল হোটেল?
-ইয়েস। দ্যাট ইজ নেয়ার হাফ কিলোমিটার এওয়ে ফ্রম হেয়ার। হোয়াটস ইউর নেম? হয়ার হ্যাব ইউ কামস ফ্রম?
-জেনি বেক্টো অগাস্টা। ফ্রম ম্যাক্সিকো।
-নাও হয়ার আর ইউ স্টেইং?
-স্টে ইন হোটেল রোজভিউ।
-ওয়াও। দ্যাট ইজ ভেরি গুড হোটেল।
কথাটি শেষ হতেই চারজন মোটর সাইকেল আরোহী আমাদের পেছনে এসে দাঁড়াল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সর্দার গোছের একজন পিস্তল বের করে বলল-যা আছে বের করে দাও। লোকটির চোখেমুখে হিংস্রতা উপচে পড়ছে। অন্য আরেকজন চাকু বের করল। সর্দার ঘরানার লোকটি কর্কশ ভাষায় বলল-চিৎকার করলে একেবারে শেষ করে দেব? সে পিস্তলের ভেতরের বুলেটিট খুলে পুনরায় লাগাল। জেনি বারবার ঢোক গিলতে লাগল। তার হাত-পা কাঁপছে। হয়ত কখনোই সে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়নি।
বুলেটটি দেখে আমারও যে ভয় লাগেনি তা নয়। এসব ছিনতাইকারীদের একদম বিশ্বাস নেই। ভালোয় ভালোয় কাক্সিক্ষত জিনিসগুলো দিয়ে দিলেই ঝামেলা মিটে যায়। পণ্য বা টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য যে অনেক বেশি! আমি মোবাইলটি বের করে দিলাম। অপর আরোহী বলল-মানিব্যাগ দে।
‘তুই’ সম্বোধন আমার একতম ভালোলাগে না। কিন্তু করারও যে কিছু নেই। ভদ্রতা শেখাতে গেলেই যে বিপদ!
ছিনতাইকারীরা বেশিরভাগ সময়ই আক্রান্তদের তুইতুকারি সম্বোধন করে; এমনকি বয়সে বড়ো হলেও। ক্ষমতার প্রভাব বলে কথা!
আমি ইতস্তত করতে লাগলাম। লোকটি খুব দ্রæত চাকু বের করল। চাকু দিয়ে আঘাত করার আগেই আমি মানিব্যাগ বের করে দিলাম। এবার জেনির দিকে তাকিয়ে বলল-সিস্টার ক্যামেরা দিন। জেনি বাংলা বুঝে কিনা জানি না। তবে সর্দারের বলার ভঙ্গিতে সে বুঝে ফেলল। কোনোরকম সিনক্রিয়েট না করে ক্যামেরাটি দিয়ে দিলো। ভ্যানিটি ব্যাগটি সর্দার জোর করেই ছিনিয়ে নিল। কর্কশভাষায় বলল-মালটা খারাপ না!
বাংলাভাষায় স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী মাল শব্দটির বহু অর্থ রয়েছে। কিন্তু কোনো নারীকে উদ্দেশ্য করে যখন বলা হয় তখন পুরোটাই নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করা হয়। ভোগ্যপণ্য হিসেবে তুলনা করা হয়, পতিতা বা যৌনকর্মী জ্ঞান করা হয়। আমার কেন যেনো খুবই খারাপ লাগল। আমি বললাম-খারাপ ভাষা ব্যবহার করছেন কেন? সবকিছু তো চাওয়ামাত্রই দিয়ে দিয়েছি। আমার কথা শুনে সর্দারের মেজাজ যেনো আরও বিগড়ে গেল। সে আরও কর্কশ গলায় বলল-দেখ মাগির জন্য মাগার কত দরদ! কথাটি বলেই সর্দার পেছনের জনকে চোখটিপা দিলো। পেছনের জন তড়িৎগতিতে আমাকে লাথি মেরে ফেলে দিলো। নিচে পড়তেই ভাঙা পাথরে আমার মাথার খানিকটা কেটে গেল। মাদারচোত, বিদেশি মালের জন্য দরদ একেবারে উথলে উঠছে! বলেই সে লোহার রড দিয়ে হাঁটু বরাবর আঘাত করেই দিলো ছুট! আমি প্রচÐ ব্যথায় কুকরাতে লাগলাম। জেনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল-উহ্! ভেরি স্যাড! নটি বয়, আগলি গাইস! বাংলাদেশ ইজ ডারটি কান্ট্রি।
জেনির শেষের কথাটি সর্দারের রডের আঘাত থেকেও আমার কাছে বেশি বলে মনে হলো। জেনি আমাকে তোলার চেষ্টা করে। তার কণ্ঠ খুবই মিষ্টি। কোমলকণ্ঠে বলছে-উহ্! ইট ইজ বিøডিং। তার গলায় একটুকরো কাপড় ছিল। সম্ভবত ঠান্ডাজনিত কারণে গলাকে রক্ষার জন্যই এ বাড়তি কাপড়। সে কাপড়টি খুলে আমার রক্ত মুছে দিলো। কোনো যুবতী নারী এই প্রথম আমাকে আলতোভাবে ধরে নিবিড় যতœ করছে। ভালোবাসার টানাপোড়েন ঘটলেই মানুষ যত ঝামেলা বাধায়। জেনির কোমল হাতের স্পর্শে মাথা ব্যথার কথা প্রায় ভুলেই গেলাম। আহা! জীবন! জেনি আমাকে ধরে তোলার চেষ্টা করে। হাঁটুর ব্যথায় পা সোজা করতে পারছি না। হাড় ভেঙে গেল কিনা বুঝতে পারছি না। নিকটাত্মীয় কাউকে বিষয়টি জানানো দরকার। কিন্তু এই মুহূর্তে কারো মোবাইল নাম্বারই যে মনে পড়ছে না।
জেনি হাঁটু ম্যাসেজ করে দেওয়ার চেষ্টা করে। আমি বারণ করতেই সে ম্যাসেজ বাদ দিয়ে আমাকে হাঁটানোর চেষ্টা করে। আমার এক হাত তার কাঁধের ওপর নিয়ে আলতোভাবে জড়িয়ে ধরে, খুব সতর্কভাবে হাঁটানোর চেষ্টা করছে। বিনয়ের সঙ্গে বলছে-প্লিজ ট্রাই টু ওয়াক। প্লিজ! আমি তার চোখের দিকে তাকাই। এমন সুন্দর চোখের দিকে তাকিয়ে বিষও হজম করা যায় আর এ তো খুবই নস্যি কাজ!
মানুষের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনাই থাকে অনাকাক্সিক্ষত। ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা সম্পর্কে মানুষ ধারণা তো দূরে থাক কল্পনাও করতে পারে না। এই যেমন আমি পারিনি। তবু মানুষ বাস্তবতাকে মনে নেয়, মেনেও নেয়। এটাই জীবন!
মিনিট পাঁচেক পর কিছুটা আরামবোধ করলাম। দুজনে পাথরের ওপর বসে আছি। কোনো কথা নেই । এভাবেই কয়েক মিনিট কেটে গেল। নীরবতা ভেঙে আমি বললাম-জেনি, থ্যাঙ্কস ফর হসপিটালিটি। নাউ আ হ্যাব টু গো ব্যাক। এ লট অফ থ্যাংকস। অদূরেই এক সিএনজি। আমি ইশারা করতেই সে কাছে এলো। আমি রোজভিউতে রিজার্ভের কথা বলতেই সে রাজি হয়ে গেল।
জেনিকে বললাম-জাস্ট পেমেন্ট হানড্রেড টাকা অনলি। প্লিজ। প্যান্টের ছোটো পকেটে এক হাজার টাকার দুটো নোট ছিল। জিন্সপ্যান্টের ছোটো পকেটগুলো চাবির পকেট বা চোরা পকেট নামেই বেশি পরিচিত। বাইরে কোথাও বেরুলে এই চোরাপকেটে আমি অতিরিক্ত কিছু টাকা রাখি। একটি নোট জেনির হাতে দিয়ে বললাম-প্লিজ। ইফ আই অ্যাম এলাইভ আই উইল সি ইউ এগেইন। জেনির চোখেমুখে তখন বিস্ময় উপচে পড়ছে। একুশ বা বাইশ বছরের একজন টগবগে যুবতী আমার আচরণে একেবারে হা হয়ে তাকিয়ে রইল। উচ্চতা পাঁচ ফিট সাত ইঞ্চির মতো হবে। ¯িøম ফিগার। দুপুরের তপ্ত রোদ্দুরে জেনিকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে। পাথরচুয়া নদীর বাতাসে জেনির লাল চুলগুলো এলাপাথারি উড়ছে। জেনিকে দেখলেই স্বর্গীয় হুরকে অনায়াসেই কল্পনা করে নেওয়া যায়। একটু আগেই সে কিছু বখাটেদের কারণে বাংলাদেশ নোংরা বলেছে। আর এখন হয়ত সে কথার জন্য তার অনুতাপই হচ্ছে। যাইহোক, জেনিকে সিএনজিতে তুলে দিতেই সে বলল-ইউ?
ডোন্ট ওরি! আই উইল কাম এস সোন এস পসিবল। বাই দ্যা ওয়ে আই অ্যাম অর্ণব। টেক কেয়ার, বাই।
জেনিকে বিদায় দিয়ে আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে লাগলাম। পার্কেই রাখা ছিল আমাদের প্রাইভেট কারটি। রক্তমাখা মাথা দেখেই বন্ধু চিন্ময় বলল-কী হয়েছে তোর? একসিডেন্ট হয়েছে? নাকি কেউ মেরেছে? কীভাবে হলো?… আমি তাকে অভয় দিয়ে বললাম-বন্ধু, আমার মানিব্যাগ আর মোবাইল ছিনতাইকারীরা নিয়ে গেছে। পায়ে প্রচÐ ব্যথা করছে। ওরা হাঁটুতে রড দিয়ে আঘাত করেছে। ভেঙে গেল কিনা? আমার কথাটি শেষ হতেই সে আমাকে ধরে দ্রæত প্রাইভেটকারে তুলল। তুলতে তুলতে বলল-তারা কি এখানেই আছে? – না। চিন্ময় দ্রæত গাড়ি স্টার্ট দিলো। আমরা ওসমানি মেডিকেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
নাইয়রপুল টার্নিংয়ে আসতেই দেখি সেই সর্দার! ওরা কি তাহলে শহরের ছিনতাইকারী? সর্দারের পেছনের আরোহীর কাছে বড়ো একটি কাধব্যাগ। আমি চিন্ময়কে দেখিয়ে বললাম-ওই যে! ওরাই ছিনতাই করেছে। চিন্ময় জানালার ফাঁক গলিয়ে জোরে আওয়াজ করল-হেই ক্রিমিনাল? এত মানুষের মধ্যে সর্দার ও তার সঙ্গীই কেবল আমাদের দিকে তাকাল। ওই যে, চোরের মন পুলিশ পুলিশ!
পয়েন্টেটি এমনিতেই খুব ব্যস্ততম। যানবাহন একটির পেছনে আরেকটি লেগেই থাকে। সর্দার চিন্ময়ের দিকে তাকাতেই ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত বিপদ। অপরদিক থেকে আসা দ্রæতগামী লেগুনার ধাক্কায় সর্দারের মোটরসাইকেলটি একেবারেই উলটে গেল। রাস্তার পাকা অংশের সাথে লেগে সর্দারের চেহারা মুহূর্তেই বিকৃত হয়ে গেল। সর্দারের আরোহীর অবস্থা আরও খারাপ। মাথার সামনের অংশ থেতলে এমন অবস্থা হয়েছে যে এখন আর চেনার কোনো উপায় নেই!
চারদিক থেকে মানুষ জমা হতে লাগল। পয়েন্টে কর্তব্যরত পুলিশ দৌড়ে এলো। গাড়ি পার্ক করে আমি এগিয়ে যাই। চিন্ময় একেবারেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। এমনটি হবে সেও ভাবতে পারেনি। লোকজন লেগুনাকে আটক করল। ড্রাইভার পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই চতুর জনতা তাকে ধরে ফেলল। পরিচিত, অপরিচিত কর্কশ গালিসমগ্রের মধ্য দিয়ে উত্তেজিত জনতা ড্রাইভারকে উত্তমমধ্যম দিতে লাগল। যে সুযোগ পেল না, সেও মুখে জোস এনে বলছে-মার শালারে! মার!
পুলিশ বলে কয়েও যেনো পরিস্থিতি শান্ত করতে পারছে না। সবাই ড্রাইভারকে নিয়েই ব্যস্ত। পুলিশ কেস বলে কেউ সর্দার ও তার সঙ্গীকে সহযোগিতা করতে চাইল না! আহা! অভাগা দেশ আমার! আমি এগিয়ে গিয়ে পুলিশকে বললাম-স্যার, যে একসিডেন্ট করেছে সে আমার ভাই। আমি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাই। আমি কর্তব্যরত পুলিশকে আমার পরিচয়পত্র দেখালাম। কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয় পেয়ে পুলিশ অফিসার আর কোনো আপত্তি করেনি। আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম-স্যার, আপনি মোটরসাইকেলটার একটা ব্যবস্থা করুন। আমি তাদের দুজনকে ওসমানিতে নিয়ে যাচ্ছি। চিন্ময়কে হাত ইশারা কের প্রাইভেটকারটি নিয়ে আসতে বললাম। সে অবোধ শিশুর মতোই আমার নির্দেশ পালন করল। আমি পুলিশসহ সকলকে বললাম-একটু কষ্ট করে গাড়িতে তুলে দিন।
সর্দার ও তার আরোহীকে গাড়িতে তুলার ফাঁকে আমি মনে করেই তাদের হাতব্যাগটা গাড়িতে তুলি। ব্যাগটি রক্তে ভেজা! দুজনেই সেন্সলেস! ওসমানিতে ভর্তি করে দিয়েই আমি বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম-কখন জ্ঞান ফিরে। নিজের পায়ের ব্যথাকেও খুব নস্যি মনে হলো। হঠাৎ আমার মনে পড়ল জেনির ব্যাগের কথা। আমি খুব দ্রæত নিচে নামি। গাড়ির ভেতর কাঁধব্যাগটি খুলেই দেখি-সেখানে ভ্যানিটিব্যাগ, ক্যামেরা, স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, পিস্তল, কয়েকটি মোবাইল, হাজার বিশেকের মতো নগদ টাকা। জেনির ভ্যানিটিব্যাগ চেক করি। পাসপোর্ট, ভিসা, চাবি, বাংলাদেশি টাকা, ম্যাক্সিকান ডলারসহ বেশকিছু জরুরি কাগজপাতি রয়েছে।
আমি চিন্ময়কে বললাম-তুই এখানে থাক, আমি কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে আসছি। চিন্ময় নাছোড় বান্দা। সে দরদমাখা গলায় বলল-এ পরিস্থিতিতে তুই গাড়ি চালাতে পারবি না। আমি তোকে ড্রপ করে দিব। আমি কথা বাড়ালাম না। কেবল চিন্ময়কে বললাম-চল, রোজভিউতে যাব।
দুই
ভিত্রিখেল এবং আসামপাড়া পাশাপাশি দুটি গ্রাম। আয়তন এবং লোকসংখ্যার দিক দিয়ে ভিত্রিখেল বড়ো। এই দুই গ্রামের মধ্যভাগে আছে দিগন্তজোড়া ফসলের মাঠ। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। দিগন্তরেখায় আকাশ আর সবুজের যেনো নিত্য মাখামাখি চলে। এই অপূর্ব মাঠেই এক টুকরো জমি আছে ছাদেকের। তাও আবার তার নিজের নয়; উত্তরাধিকারসূত্রে পিতার কাছ থেকে পাওয়া। এই জমির আয়ে ছাদেকের সংসার চলে না। তাই সে অন্যের জমি বর্গা নিয়েও চাষ করে। সকাল বেলা প্রচÐ শীত উপেক্ষা করেও সে তার ধানী জমি দেখতে এসেছে। ভাগ্যবিড়ম্বিত এসব লোকদের বেঁচে থাকার জন্য ঠান্ডা-রোদ-বৃষ্টিকে আগ্রাহ্য করেই চলতে হয়। এ যেনো নিয়তির এক নির্মোহ লিখন!
নতুন সন্তানকে দেখার মতোই অপার কৌতূহল নিয়ে জমির চারদিক ঘুরে ফিরে দেখল ছাদেক। বেশ সতেজ এবং খ্বু দ্রæত বেড়েও ওঠেছে ধানগুলো। সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে কী যেনো ভাবলো। বিড়বিড় করে নিজের সাথে নিজেই কথা বলছে । কী যে সে দুর্বোধ্য ভাষা! জগতের সেরা সেরা ভাষাবিজ্ঞানীদেরও হয়ত কয়েক শতাব্দি লেগে যাবে সে অর্থ উদ্ধারে! ফসলের জমি দেখে তৃপ্ত মনে পুনরায় সে বাড়ির দিকে রওয়ানা দেয়। ততক্ষণে হালকা কুয়াশা এবং শীতের তীব্রতা অনেকটাই কেটে গেছে। ছাদেক যেতে যেতে পরিকল্পনা করে-বাড়ি ফেরার আগে ফজলুর সাথে একটু দেখা করে যাওয়াই ভালো। নিজ বাড়ির পথ থেকে ফজলুর বাড়ির পথে পা বাড়াতেই পেছন দিকে থেকে ডাক পড়লÑ
– চাচা… চাচা… ও… চাচা?
-ওই রকম চ্যাচামেচি করতাছত ক্যান? কী অইছে?
-চাচা! চাচা! (দম নিয়ে)
-ক, কী অইছে?
-চাচি যেন কেমন করতাছে চোখ বড়ো বড়ো করে আর জানি কেমুন অইয়া যায়!
-কী কস তুই? আমি তো ভালোই রাইখ্যা আইলাম।
-জলদি আহো; নইলে…! বাকীটুকু অজানা শঙ্কায় আর বলতে পারলো না।
– হু, চল।
খুব দ্রুত বাড়ি ফিরে ছাদেক। প্রতিবেশীরা এসে ঘরে ভিড় জমিয়েছে। কেউ কেউ কানাকানি করতেছে যে ওকে ভূতে ধরছে’। আবার তাকে থামিয়ে দিয়ে অন্যজন বলছে–আরে না ওরে পিশাচে ধরছে; দেহস না কেমনে খিঁচুনি দিতাছে আর চোখও কেমুন বড় বড় করতাছে?
ছাদেককে দেখে তার শাশুড়ি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলল-বাজান, আমার এই পুয়াতি মাইয়াডারে বাচাঁও। তাড়াতাড়ি ফকির ডাইকা নিয়া আহ-বলতে বলতে চোখের পানি মুছতে থাকে আচল দিয়ে। অবলা নারীদের প্রধান অস্ত্রই তো চোখের পানি!
–ফকির আনুম না গনি মুনসির কাছে নিমু?
ছাদেকের ষোল বছর বয়সী শ্যালক মিজান প্রতিবাদ করে বলে- না, না, –আপারে সদর হাসপাতালে নিয়া চলেন । মিজানকে থামিয়ে তার মা বলে, – তুই থাম! সব রোগ ডাক্তাররা বালা করবার পারে না; ওর উপরি বাতাস লাগছে … ভূতে ধরছে; দেহস না কেমুন করতাছে? আহারে! তাড়াতাড়ি যাও বাজান । আবেগ জড়িত কণ্ঠে আহবান করতে থাকে ছাদেকের শাশুড়ি। উপস্থিত সবাই সমস্বরে বলে উঠল – হ্ হ্ ফকির আনাই ভাল অইবো;
আ
মিজান গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে । সংসারিক ঝামেলার ও অর্থনৈতিক টানাপোড়নের কারণে তাকে অষ্টম শ্রেণিতেই ইস্তফা দিতে হয়েছে । প্রায় বছর সাতেক হবে পড়াশুনাতে ইস্তফা দিয়েছে । এরই মাঝে সে বিয়েও করেছে । যাকে বিয়ে করেছে তার নাম নিপা । দেখতে খুবই রূপবতী, ছিমছাম দেহ । হাসলে তার দু’গালে টোল পড়ে । মক্তবে পড়াশুনা করেছে । স্কুলের গণ্ডিতে তার আর যাওয়া হয়ে ওঠে নি । বয়সে মিজানের চেয়ে বছর দুয়েকের মত ছোট হবে । সর্ম্পকে খালাত বোন । সাত মাস হয় নিপা একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে । কন্যা সন্তান প্রসব করায় মিজান নিপার প্রতি অসন্তুট; কেননা সে মনে মনে প্ত্রু সন্তানের প্রত্যাশা করেছিল । এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই সে নিপাকে বকা ঝকা করে । নিপা অবশ্য ভুলেও এর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। একে তো তার বাবার অর্থিক অবস্থা খুব খারাপ অপরদিকে তার শিক্ষাগত যোগ্যতাও কম । ফলে লোক চক্ষুর আড়ালে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে স্রষ্টাকে পুনঃপুন অভিশাপ দিয়ে নিজেই নিজেকে প্রবোধ দেয় । নিপার নানি সবকিছু শুনে নিপাকে সান্ত্বনা দেওয়ার ছলে বলে- সইযযো করগো বইন, সইযো কর । মাইয়্যা অইয়া জন্মাইছত, সোয়ামির ঐ রকম ইকটু-আধটু কতা তো হুনন নাগবই ।
নিপা নানির কথায় শুধু নিঃশব্দে চোখের পানি মুছে । অভাগীদের যে ঐ একটিই অস্ত্র অনেকটা শিশুদের মত! কয়েকদিন আগেও মিজান নিপাকে অহেতুক ঘটনার কেন্দ্র করে বেশ মারধরও করেছিল । সেদিন চোখের পানি আচল দিয়ে মুছতে মুছতে নিপা তার নানিকে বলেছিলো – নানি গো! মাইয়্যা অইছি বইল্ল্যা কি আমরা মানুষ না? এই রকম কইরা আর কতকাল বিনা দোষে মাইর খাইয়া যাইমু? নানি সান্ত্বনা দিতে গিয়ে আবেগ জড়িত কণ্ঠে বলে – চুপ কর বইন, চুপ কর; এই রকম কইরা কওনও পাপ । ধৈর্য ধর বইন, সব ঠিক অইয়া যাইব । দেড় বছরের সংসার জীবনে নিপা যতটুকু না ভালবাসা পেয়েছে তার চেয়ে বেশি নির্যাতিত এবং নিগৃহীত হয়েছে । ছাদেকের বউয়ের এই মুমূর্ষু অবস্থা দেখার জন্য নিপাও এসেছে । সে কোন কথা বলছে না। শুধু নীরব দর্শকের মত সবকিছুই দেখে যাচ্ছে ।
আসার পথে তার নানিকে ফিসফিস করে বলছিল – আপারে সদর হাসপাতালে নেওয়নই ভাল, কি কও নানি?
– চুপ কর! যার বউ হেই বুঝবো; তর অত বেশি বুইঝযা লাভ নাই।
নানির সেই ধমকিস্বরে কথা শুনার পর থেকেই সে চুপ হয়ে গেছে । হয়ত সে কথা বললেও তা কেউ শুনতো না! বয়সে ছোট বলে অবজ্ঞা করা হত! যেমন করা হল মিজানের বেলায়। সেও সদর হাসপাতালে নেওয়ার প্রস্তাব করেছিল । কিন্তু তার কথা কেউ মূল্যায়ন করে নি। ছাদেক দ্রুত আনোয়ার ফকিরের বাড়ির দিকে রওনা দিল । এই বিপদের দিনে মিজানকেও কিছু একটা করতে হবে–তা ভেবে সে গেল গণি মুনশির বাড়ির দিকে। আনোয়ার ফকিরের বাড়ি বেশি দূরে নয়। মিনিট বিশেকের মধ্যে আনোয়ার ফকিরকে সঙ্গে নিয়ে ছাদেক বাড়ি ফিরলো। বাড়ির আত্মীয় স্বজন তখন অনেকেই কান্না কাটি করছিলো। আনোয়ার ফকিরকে দেখতে পেয়ে সে মাত্রা আরো বেড়ে গেল।
আনোয়ার ফকির সবাইকে শান্ত হয়ে একটু দূরে সরে যেতে নির্দেশ দেয়। এর পর শুরু হয় তার তুকিতাকি। দুটি আধা ফুটের মত কাঠের টুকরা বাহির করে ঝাড়-ফুক দিতে থাকে। নাহ্! কিছুতেই কমছে না। বরং ক্রমে ক্রমে আরো অবনতি হচ্ছে। কিন্তু ফকির সাহেব তা বুঝেও যেন বুঝলেন না। কেননা তিনি হেরে যাওয়ার মত ফকির নন । উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তার এই পীরালী সূত্র ভুল হতে পারে না! প্রচণ্ড রকম অন্ধবিশ্বাস তার মধ্যে কাজ করতে থাকে।
একটু পর কাঠের টুকরা দুটির মধ্যে ছাদেকের স্ত্রীর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুল সজোরে চাপ দিয়ে বলছে – ক্ যাইবি কিনা ? ক্ অ …………..? আরো জোরে চাপ দিতে থাকে ।
ছাদেকের স্ত্রী প্রচণ্ড ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে। তার চিৎকারে আকাশ ভারি হয় ওঠে। কষ্টের সবোর্চ্চ সীমায় পৌঁছলে মানুষের যে অবস্থা হয় তেমনি অবস্থা আর কি! পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটে হচ্ছে কিন্তু কেউ কিছুই বলছে না। শুধু নীরব দর্শকের মতই ফলাফলের অপেক্ষায় আছে। কেবল ছাদেকের শাশুড়িই তার মেয়ে মর্জিনাকে প্রবোধ দেওয়ার ছলে বলে- কান্দিস না মা! সব বালা অইয়া যাইবো। মর্জিনার চিৎকারে ছাদেক বিচলিত হতে থাকে। কিন্তু বংশ পরম্পরায় পীরদের প্রতি তার যে একধরনের বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে তার বিশ্বাসকেও সে অবিশ্বাস করতে পারছে না।
ই
বিশ্বাসগুলো মাঝে মাঝেই যে ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে তা সে ভাবতে পারে না। চিন্তার পরিধি খুবই ছোট । গ্রামীন অশিক্ষা কুশিক্ষা আর নানাবিধ হাজারো কুসংস্কারের মধ্য দিয়েই সে বেড়ে ওঠেছে। সভ্যতার আলো বাতাস, আধুনিকতার ছোঁয়া তেমন একটা লাগেনি বললেই চলে । এরই মধ্যে গণি মুনশিকে নিয়ে এসেছে মিজান । সবার দৃষ্টি তখন গণি মুনশির দিকে । কিছুটা হলেও তখন আশার সুবাতাস বইতে শুরু করলো তাদের মধ্যে । কেবল আনোয়ার ফকিরই কেবল গণি মুনশির আগমনকে সুনজরে দেখলো না। কিন্তু সে গোপন হিংসা আপাদত গোপনেই রেখে দিল।
মুনশি – আসসালামু আলেকুম, ফকির সাপ!
– ওলেকুম ছালাম
– রোগীর কি অবস্থা?
– (কাছে এসে ফিসফিস করে) বেশি ভাল না; (ব্যাঙ্গ স্বরে) দেহেন আপনি কিছু করবার পারেন নি!
মুনশি এক গ্লাস পানি এনে বিড়বিড় করে যেন কি পড়লো তারপর গ্লাস ভর্তি পানি ছাদেকের স্ত্রীর সমস্ত শরীরে ছিটিয়ে দিল। হঠাৎ পানির ছিটা পেয়ে মর্জিনা একটু নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করে । তখন সবারই মনে হতে লাগলো এই বুঝি মর্জিনা ভাল হতে চলছে! নিজেও বিড়বিড় করে কি পড়ে যেন ছাদেকের স্ত্রীকে ঝাড়-ফুক দিতে লাগলো । এদিকে ফকির আনোয়ারও থেমে নেই । কেরামতিতে হেরে গেলে যে চলবে না! যদিও তাদের মধ্য স্নায়ু যুদ্ধ চলছিল আমেরিকা বনাম সোভিয়েত ইউনিয়নের মত!
যৌথভাবে চলতে লাগলো তাদের চিকিৎসা । আনোয়ার ফকির একটি মোটা খালি বোতল আনলো। গণি মুনশি তখন ঝাড়-ফুক বাদ দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে রইলো। আনোয়ার ফকিরের কেরামতিতে যদিও সে একটু বিব্রতবোধ করছে তথাপিও সামগ্রিক স্বার্থে সে নীরব ভূমিকা পালন করছে। অবস্থা দেখে মনে হবে যেন চোরে চোরে মাসতুতু ভাই! ফকির সাহেব তখন রোগীর সামনে দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে খানিক ক্ষণ কি যেন বিড়বিড় করলো। তারপর খোলা বোতলের মুখে ছিপি লাগাতে লাগাতে বলল–বহুত ক্ষণ পরে তরে আটকাইছি! অহন যাইবি কই?
মুনশিসহ সবাই তখন একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল । উত্তরীয় ফুরফুরে বাতাস বইতে শুরু করেছে । আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা এক অন্যরকম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে । এটা যেন শুভ লক্ষণ! তাদের সবার চোখেই কৌতূহল, অপার বিষ্ময়! ফলাফল কি হয়!
ফকির সাহেব ঘুরে ঘুরে বোতল ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলতে থাকে – হে নষ্ট পিশাচ! ক্… অহন কেমুন করবি? অহন কেমনে বাইরাবি?
গ্রামের লোকেরা এইসব ঘটনা প্রায়ই দেখে অভ্যস্ত । ছাদেকের স্ত্রীর তখন আবারো খিঁচুনি ওঠে । শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে সে হাত পা ছোড়ার চেষ্টা করে। কর্কশভাবে দাঁতে দাঁত লেগে যাচ্ছে। এখনই বুঝি সব দাঁত ভেঙে যাবে। যাতে দাঁত ভেঙে না যায় এজন্য মর্জিনার মা মর্জিনার মুখে ছোট চামুচ ঢুকিয়ে রাখলো । ফলে সে চিৎকার করতে গিয়েও করতে পারলো না । মুখের কিনারা দিয়ে সাদা ফেনা বের হচ্ছে। একটু পর চামুচ তুলে ফেললে গগণ বিদারী চিৎকার দিতে থাকলো মর্জিনা। তার চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
বেশ কয়েকজন মহিলা ও পুরুষ তার হাত পা ধরে রেখেছে। আরেকবার জোরে চিৎকার দিয়ে চোখ দুটি বড় বড় করলো। দাঁতে দাঁত লাগলো। ক্ষাণিক ক্ষণ পর তার উত্তেজিত শরীর ধীরে ধরী শীতল হয়ে এল। চোখ দুটিও ধীরে ধীরে ছোট হয়ে এলো। গভীরভাবে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল। ফকির সাহেবের বক্তৃতায় সবাই মুগ্ধ । সবাই ভাবল ছাদেকের স্ত্রী ভাল হয়ে গেছে । ছাদেক তার স্ত্রী থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে ফকির সাহেবের কর্মকাণ্ড মুগ্ধ হয়ে দেখছিল। এক প্রকার অলৌকিক অগাধ বিশ্বাস তার চোখ মুখ জুড়ে খেলা করছিল ।
বোতলে আবদ্ধ পিশাচকে উদ্দেশ্য করে বেশ কিছুক্ষণ চলতে থাকে তার শ্রাব্য-অশ্রাব্য গালিগালাজ। সে গালি বোধ করি সভ্য সমাজের কোন ভদ্রলোক কখনো শুনেন নাই। অনেক সময় সময় পেরিয়ে যাবার পর ছাদেকের শাশুড়ি তার মেয়েকে ডাকছে– মা মর্জিনা! ওঠো, ওঠো মা, ওঠো…! মর্জিনার কোন অনুভূতি নাই। ফকির ইশারা করে তাকে ঘুম থেকে তোলার তাগাদা দেয়। ফকিরের ইশারা পেয়ে ব্যগ্র হয়ে সে মর্জিনার শরীরে ধাক্কা দিয়ে পুনরায় বলল – উঠ্ মা, উঠ্। কোন স্পন্দন নেই বলে সে হতবাগীর মত আশের মানুষজনের দিকে তাকায়। তার বুক ফেটে কান্না চলে আসে। চিৎকার করে সবাইকে বলে – তোমরা মর্জিনারে ঘুম থিইক্যা তুলো… ঘুম থিইক্যা তুল।
মর্জিনা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। এরপর অনেকেই চেষ্টা করেছে মর্জিনার ঘুম ভাঙ্গাতে কিন্তু কেউ পারে নি। অনন্ত ঘুমের দেশে চলে গেল মর্জিনা।
০৬.১০.২০১১
রাধানগর, জাফলং, গোয়াইনঘাট, সিলেট
+১
রোজভিউয়ের সামনে গাড়ি পার্ক করে চিন্ময়কে বললাম-তুই বস, আমি কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছি। বের হওয়ার সময় ভ্যানিটিব্যাগ ও ক্যামেরা সাথে নিই। রিসিপশনিস্টের কাছে গিয়ে জেনির পরিচয় দিতেই বলল-নয় নং ফ্লোরে ৃ নং রুমে। আমি লিফটে নয় তলাতে পৌঁছলাম। কলিংবেল টিপতেই জেনি বের হয়ে এলো। আমাকে দেখে তার চোখ যেনো কপালে ওঠার মতো অবস্থা! অর্ণব! হাউ পসিবল? ইজ ইটস ড্রিম? আমি জেনির দুহাতের ওপর নিজের এক হাত রেখে বললাম-নো, ইটস রিয়াল! হেয়ার ইজ ইউর ভ্যানিটিব্যাগ এন্ড ক্যামেরা। জেনি ভ্যানিটিব্যাগ আর ক্যামেরার দিকে তাকাল। বিস্মিতস্বরে বলল-হাউ পসিবল? সে ভ্যানিটিব্যাগ খুলে সবকিছু চেক করে আমার দিকে তাকাল। তার চোখমুখে কৃতজ্ঞতা আর বিস্ময়ের ঢেউ উপচে পড়ছে। মনে হলে সে যেনো বিস্ময়ের বৃষ্টিতে স্নান করছে!
আমি মুচকি হেসে বললাম-ইজ নট বাংলাদেশ ডারটি কান্ট্রি? জেনিও আমার হাতে হাত রেখে মুচকি হেসে বলল-নো। বাংলাদেশ ইজ এ বিউটিফুল কান্ট্রি!
রাত তখন কাটায় কাটায় … (চলবে)