রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংক্ষিপ্ত জীবনী

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ই মে, ১৮৬১ – ৭ই আগস্ট, ১৯৪১) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি, গীতিকার, নাট্যকার, দার্শনিক, সুরকার এবং চিত্রকর। তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির এক কিংবদন্তি চরিত্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম ভারতীয় হিসেবে ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।

প্রাথমিক জীবন:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং মা শারদা দেবী। তিনি ১৩ ভাই-বোনের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য, সংগীত এবং সংস্কৃতির প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তাঁর শিক্ষার শুরু হয় বাড়ির মধ্যে, পরে তিনি ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেন, তবে ইংল্যান্ডের শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর ওপর তেমন প্রভাব ফেলে নি।

সাহিত্যকর্ম:

রবীন্দ্রনাথের লেখালেখির শুরু অত্যন্ত ছোট বয়সে। তাঁর প্রথম কবিতা ১৩ বছর বয়সে প্রকাশিত হয়। তাঁর সাহিত্যকর্মের মধ্যে কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, ছোটগল্প, প্রবন্ধ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। তাঁর সবচেয়ে পরিচিত ও জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থের মধ্যে “গীতাঞ্জলি” (১৯১০), “ছিন্নপত্র”, “পথের পথিক” প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

রবীন্দ্রনাথের লেখা গানের সঙ্গীতকল্পনায়ও তাঁর সৃষ্টির প্রভাব ব্যাপক। “রবীন্দ্র সঙ্গীত” নামক শ্রেণিতে তাঁর প্রায় তিন হাজার গান শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় গাওয়া হয়।

রাজনীতি ও সমাজসংস্কৃতি:

রবীন্দ্রনাথ স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদিও তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হননি, তবে তাঁর সাহিত্য ও কবিতায় জাতীয় চেতনার কথা উঠে এসেছে। “আমার সোনার বাংলা” গানটি ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রচিত হয় এবং পরে স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তিনি তাঁর লেখালেখি ও বক্তৃতার মাধ্যমে সমাজের অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার এবং অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।

শেষ জীবন ও মৃত্যু:

রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবন ছিল শারীরিকভাবে দুর্বল, কিন্তু তিনি সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন হননি। ১৯৪১ সালের ৭ই আগস্ট তিনি কলকাতায় পরলোক গমন করেন।

উত্তরাধিকার:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু বাংলা সাহিত্যেরই নয়, পৃথিবীজুড়ে সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং মানবাধিকারের এক অনন্য প্রতীক। তাঁর সাহিত্যসম্ভার বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরেছে এবং তিনি আজও পাঠক, শ্রোতা, শিল্পী ও লেখকদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *