রাজবন্দীর জবানবন্দী
কাজী নজরুল ইসলাম
### **ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের জন্য প্রশ্নোত্তর**
**(কাজী নজরুল ইসলামের “রাজবন্দীর জবানবন্দি”)**
প্রবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহ :
✦ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (১ নম্বর প্রশ্ন – এক বা দুই বাক্যে উত্তর দিতে হবে)
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
-
কাজী নজরুল ইসলাম কোন উপলক্ষে এই জবানবন্দী প্রদান করেন?
-
‘আমি রাজদ্রোহী নই, আমি সত্যদ্রোহী’ – এই উক্তির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
-
নজরুলের মতে ‘অপরাধ’ কাকে বলে?
-
রাজবন্দী হিসেবে নজরুল নিজেকে কীভাবে চিহ্নিত করেছেন?
-
কাজী নজরুল ইসলাম কোন ভাষায় এই জবানবন্দী প্রদান করেন?
-
কবি তাঁর জবানবন্দীতে কোন ধরনের আদালতের সমালোচনা করেছেন?
-
নজরুল কোন জাতীয় চেতনার কথা বলেছিলেন এই জবানবন্দীতে?
-
‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই’ – এই উক্তিটি কার?
-
নজরুল কেন বিচারককে “দেখতে দেবতার মত, কিন্তু…” বলেছিলেন?
✦ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (৪ নম্বর প্রশ্ন – ৪-৫ লাইনের মধ্যে উত্তর দিতে হবে)
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ রচনার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
-
নজরুল ‘বিচার’ শব্দটির অর্থ কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
-
নজরুল কেন নিজেকে রাজদ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী বলে অভিহিত করেন?
-
এই জবানবন্দীতে কবি ‘মানবতা’ ও ‘ন্যায়বিচার’-এর কী চিত্র তুলে ধরেন?
-
নজরুল ইসলামের বক্তব্যে স্বাধীনতার ধারণাটি কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধটি একটি রাজনৈতিক দলিল হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করা যায়?
-
নজরুল কার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এই প্রবন্ধে এবং কেন?
-
‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই’ — এ উক্তির পটভূমি ব্যাখ্যা করো।
-
নজরুলের মতে, শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা বিচারব্যবস্থা কীভাবে প্রভাবিত হয়?
-
নজরুলের ভাষায় ‘বিদ্রোহ’ শব্দটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।
✦ রচনামূলক প্রশ্ন (১০ নম্বর প্রশ্ন – বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হবে)
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক চেতনা ও মানবতাবাদী মনোভাব কীভাবে প্রকাশ করেছেন – আলোচনা করো।
-
এই প্রবন্ধে ব্যবহৃত ভাষা ও শৈলী নজরুলের বিপ্লবী ব্যক্তিত্বকে কীভাবে তুলে ধরে?
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ একটি সময় সচেতন প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর — আলোচনাও সহিত ব্যাখ্যা করো।
-
বিচার ও মানবাধিকার বিষয়ে নজরুলের দৃষ্টিভঙ্গির পর্যালোচনা করো।
-
‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ একটি সাহসী, আত্মমর্যাদাশীল এবং আদর্শবাদী কণ্ঠস্বর — বিশ্লেষণ করো।
প্রবন্ধের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নসমূহের উত্তরমালা
(ডিগ্রি শিক্ষার্থীদের অনুশীলনের জন্য উপযোগী)
✦ অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (১ নম্বর)
(কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে)
- ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধটি প্রথম কোথায় প্রকাশিত হয়?
➤ ‘লাঙল’ পত্রিকায়, ১৯২৩ সালে। - কাজী নজরুল ইসলাম কোন উপলক্ষে এই জবানবন্দী প্রদান করেন?
➤ ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লেখা ও বিদ্রোহী কবিতার কারণে কারাবন্দি অবস্থায় আদালতে। - ‘আমি রাজদ্রোহী নই, আমি সত্যদ্রোহী’ – এই উক্তির মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
➤ তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন, রাজতন্ত্রের নয়, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান নেন। - নজরুলের মতে ‘অপরাধ’ কাকে বলে?
➤ যে কাজ শাসকের চোখে অপরাধ, তা জনমানুষের চোখে ন্যায্য হতে পারে। - রাজবন্দী হিসেবে নজরুল নিজেকে কীভাবে চিহ্নিত করেছেন?
➤ সত্য ও স্বাধীনতার পক্ষে এক আত্মমর্যাদাসম্পন্ন প্রতিবাদী মানুষ হিসেবে। - কাজী নজরুল ইসলাম কোন ভাষায় এই জবানবন্দী প্রদান করেন?
➤ বাংলা ভাষায়। - কবি তাঁর জবানবন্দীতে কোন ধরনের আদালতের সমালোচনা করেছেন?
➤ ঔপনিবেশিক শাসকের প্রভাবাধীন আদালত। - নজরুল কোন জাতীয় চেতনার কথা বলেছিলেন এই জবানবন্দীতে?
➤ ভারতীয় জাতির স্বাধীনতা ও আত্মমর্যাদা। - ‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই’ – এই উক্তিটি কার?
➤ কাজী নজরুল ইসলামের। - নজরুল কেন বিচারককে “দেখতে দেবতার মত, কিন্তু…” বলেছিলেন?
➤ বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রশংসা করলেও, বিচারকের অভ্যন্তরীণ নিষ্ঠুরতা ও পক্ষপাতের প্রতি ইঙ্গিত করেন। - “রাজবন্দীর জবানবন্দী” রচনাটির রচয়িতা কে?
➤ কাজী নজরুল ইসলাম। - নজরুলকে কী অভিযোগে কারাবরণ করতে হয়েছিল?
➤ রাজদ্রোহের অভিযোগে। - নজরুল নিজেকে কার হাতের বীণা বলেছেন?
➤ ভগবানের (সৃষ্টিকর্তার) হাতের বীণা। - “আমি অমৃতস্য পুত্রঃ”—এই উক্তির মাধ্যমে নজরুল কী বুঝিয়েছেন?
➤ তিনি অমর সত্যের সন্তান, মৃত্যুভয় নেই তাঁর। - নজরুলের মতে, বিচারক কার প্রতি দায়বদ্ধ?
➤ রাজার প্রতি, ন্যায় বা বিবেকের প্রতি নয়।
**সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন (৫-৭ বাক্য)**
১. **”রাজবন্দীর জবানবন্দি” রচনার প্রেক্ষাপট কী?**
➤ *উত্তর:* ১৯২২ সালে নজরুলের *ধূমকেতু* পত্রিকায় প্রকাশিত রাজবিরোধী লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে গ্রেফতার করে। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে এই জবানবন্দি দেন, যেখানে তিনি সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
২. **নজরুল কেন নিজেকে “ভগবানের বীণা” বলেছেন?**
➤ *উত্তর:* নজরুল বিশ্বাস করতেন, কবি হলো ঈশ্বর-প্রেরিত দূত, যার মাধ্যমে সত্য প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখনী ঈশ্বরের বাণী বহন করে, তাই তিনি নিজেকে ভগবানের হাতের বীণা বলেছেন।
৩. **নজরুলের মতে রাজার আইন ও ঈশ্বরের আইনের পার্থক্য কী?**
➤ *উত্তর:* রাজার আইন স্বার্থান্বেষী ও মানবসৃষ্ট, যা শাসকের প্রয়োজনে তৈরি। অন্যদিকে, ঈশ্বরের আইন সার্বজনীন সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক, যা সকলের জন্য সমান।
৪. **”আমি মরব, রাজাও মরবে”—এই উক্তির তাৎপর্য কী?**
➤ *উত্তর:* নজরুল বুঝাতে চেয়েছেন, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সত্য চিরন্তন। শাসকের ক্ষমতা ধ্বংসশীল, কিন্তু সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
৫. **নজরুল কেন বিচারককে “রাজভৃত্য” বলেছেন?**
➤ *উত্তর:* কারণ বিচারক রাজশক্তির আনুগত্য করে, ন্যায় বা বিবেকের ভিত্তিতে বিচার করে না। তাঁর রায় রাজনৈতিক চাপে প্রভাবিত।
✦ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (৪ নম্বর)
- ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ রচনার প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা কর।
➤ ১৯২৩ সালে নজরুল ইসলাম ‘বিদ্রোহী’ কবিতাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক লেখার জন্য ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। কারাগারে বসে তিনি আদালতের সামনে যে বক্তব্য দেন, তা-ই ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। এতে তাঁর রাজনৈতিক চেতনা, সাহসিকতা ও মানবিক বোধ স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। - নজরুল ‘বিচার’ শব্দটির অর্থ কীভাবে ব্যাখ্যা করেছেন?
➤ নজরুলের মতে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোই প্রকৃত বিচার। কিন্তু ঔপনিবেশিক আদালত অন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়ে যাকে ‘বিচার’ বলে, তা আসলে নিপীড়ন। - নজরুল কেন নিজেকে রাজদ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী বলে অভিহিত করেন?
➤ কারণ তিনি কোনো রাজার বিরুদ্ধে নন, তিনি অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে। তাঁর লক্ষ্য ছিল মানুষের অধিকার, মুক্তি ও সত্য প্রতিষ্ঠা করা। - এই জবানবন্দীতে কবি ‘মানবতা’ ও ‘ন্যায়বিচার’-এর কী চিত্র তুলে ধরেন?
➤ নজরুল মানবতাকে সর্বোচ্চ আসনে বসিয়েছেন। তিনি মনে করেন, যে বিচার মানবতাবিরোধী, তা বিচার নয়। তিনি জোর দেন ন্যায়, সমতা ও মানুষের মর্যাদার উপর। - নজরুল ইসলামের বক্তব্যে স্বাধীনতার ধারণাটি কীভাবে প্রতিফলিত হয়েছে?
➤ তিনি ব্রিটিশ শাসনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাও অপরিহার্য।
✦ রচনামূলক প্রশ্ন ও উত্তর (১০ নম্বর)
প্রশ্ন: ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধে কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর রাজনৈতিক চেতনা ও মানবতাবাদী মনোভাব কীভাবে প্রকাশ করেছেন – আলোচনা করো।
উত্তর:
কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক বিদ্রোহী চেতনাসম্পন্ন কণ্ঠস্বর। তাঁর লেখা ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধটি শুধু একটি আত্মপক্ষ সমর্থনের ভাষণ নয়, বরং এটি একটি যুগান্তকারী রাজনৈতিক দলিল। ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যিনি কলম তুলে নিয়েছিলেন, তিনি এ প্রবন্ধে মানবতা, ন্যায়, ও স্বাধীনতার উচ্চারণ করেন অত্যন্ত স্পষ্ট ও সাহসিকতার সাথে।
প্রবন্ধে নজরুল তাঁর বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি রাজদ্রোহী নই, আমি সত্যদ্রোহী।” এই উক্তির মধ্য দিয়েই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার হয়ে ওঠে। তিনি ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে ছিলেন, এবং জনগণের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁর জবানবন্দীতে তিনি বলেন, “মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই” — যা তাঁর মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে তুলে ধরে।
তিনি বিচারককে দেবতুল্য রূপে বর্ণনা করলেও সমালোচনা করেন তাঁর অন্ধ, পক্ষপাতদুষ্ট বিচার ব্যবস্থার। কবি বলেন, এ বিচার মানুষের নয়, শাসকের পক্ষে প্রহসন। এভাবে তিনি বিচার ও মানবাধিকারের প্রকৃত রূপ তুলে ধরেন।
এই জবানবন্দীতে নজরুল নিজেকে একজন প্রতিবাদী, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও আদর্শবাদী মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি আত্মসম্মান বিসর্জন না দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। এ লেখায় নজরুলের ভাষা যেমন তীব্র, তেমনি তা সাহিত্যিক সৌন্দর্যেও ভরপুর।
সার্বিকভাবে, ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার এক উজ্জ্বল দলিল এবং মানবতাবাদী কণ্ঠস্বরের সাহসী প্রকাশ।